সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:০২ অপরাহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, কালের খবর :
নৌকা আছে। আছে লাঙ্গল আর মশাল। নবীনগর সদরে পাশাপাশি ঝুলছে এই তিন প্রতীকধারী প্রার্থীদের পোস্টার। ভোটের মাঠে আলোচনা এখন এটাই। মহাজোটের তিন প্রার্থী। আর বিএনপি’র একজন। সাধারণ ভোটাররা হিসাব-নিকাশ করছেন সেভাবেই। আরো বিষয় হচ্ছে আওয়ামী লীগে আছে নীরব বিরোধ। এসব মিলিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ নবীনগর আসনে মহাজোট মহাবিপদে ! ফুড়ফুড়ে বিএনপি।
নবীনগর উপজেলার ২১ ইউনিয়ন আর এক পৌরসভা নিয়ে এই নির্বাচনী এলাকা। নির্বাচনের মোট প্রতিদ্বন্দ্বী ১০ জন। তবে আলোচনার শীর্ষে আছেন চারজন। মহাজোটের এবাদুল করিম বুলবুল, বিএনপি’র কাজী নাজমুল হোসেন তাপস, জাতীয় পার্টির কাজী মামুনুর রশিদ আর জাসদের এডভোকেট শাহ জিকরুল আহমেদ খোকন। জয়ের আশা তাদের সবারই। সংসদ নির্বাচনের রেকর্ড অনুসারে ২০০৮ এর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ এখানে জয় পায় দু’বার। আর জাতীয় পার্টি ৪ বার, বিএনপি একবার। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি ছেড়ে দেয়া হয় মহাজোটের শরিক জাসদকে। জাসদের এডভোকেট শাহ জিকরুল আহমেদ খোকন বিএনপি’র হেভিওয়েট প্রার্থী ৪ বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য কাজী মো. আনোয়ার হোসেনকে পরাজিত করেন। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আবারো জিকরুলকেই দেয়া হয় মনোনয়ন। ‘শারীরিক অসুস্থতা’ এই কারন দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে তিনি তার অনুসারী আওয়ামী লীগের ফয়জুর রহমান বাদলকে মনোনয়ন ছেড়ে দেন। বর্তমানে বাদল এই আসনের এমপি হলেও তাকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেয়া হয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবাদুল করিম বুলবুলকে। তবে মনোনয়ন লড়াইয়ের শুরু থেকেই আলোচনা ছিলো এবার আসনটি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি নতুবা জাসদ পাবে। এরশাদ এবং ইনু দু’জনেই নবীনগর এসে গেছেন। জোট নেত্রীর কাছে আসনটি তারা চাইবেন সেটিও বলে গেছেন। এই অবস্থায় বর্তমান এমপি অনাগ্রহী হয়ে দলের মনোনয়ন ফরম নেয়া থেকে বিরত থাকেন। পরে তার সমর্থকরা ফরম সংগ্রহ করেন এবং জমা দেন। শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন মহাজোটের শরিক দু’দলের কেউই পাননি। মনোনয়ন বঞ্চিত হন বর্তমান এমপি বাদলও। মনোনয়ন বাগিয়ে নেন কৃষকলীগের উপদেষ্টা মো: এবাদুল করিম বুলবুল। তবে মহাজোটের শরিক ওই দু’-দলের প্রার্থীরা রয়েছেন ভোটের মাঠে। এদিকে বাদল মনোনয়ন না পাওয়ায় হতাশায় তার কর্মী-সমর্থকরা এখনো নীরব।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি-নবীনগরে এ তিন দলের অফিসই এখন সরগরম। বিভিন্ন এলাকা থেকে দলের নেতাকর্মীরা আসছেন সেখানে। নিয়ে যাচ্ছেন পোস্টারসহ প্রচার সামগ্রী। নিচ্ছেন মাঠে কাজ করার দিক-নির্দেশনা। আর প্রার্থীরাও নেমেছেন নির্বাচনী ওয়ার্কে। বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী মামুনুর রশিদ কর্মিসভা ও মিছিল করে নির্বাচনী প্রচারণার যাত্রা শুরু করেন। আর ওইদিন বুলবুল বড়াইল ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে গণসংযোগ করেন। বিএনপি’র প্রার্থী তাপসকেও দলের অফিসে ব্যস্ত দেখা যায়। আর জাসদ প্রার্থী জিকরুল বৃহস্পতিবার রাতে মহাজোট প্রার্র্থীর নিজ ইউনিয়ন সলিমগঞ্জ থেকে প্রচারণা শুরু করেন। তিনি গনি শাহ’র মাজারে যান। এছাড়া শামগ্রামেও গণসংযোগ করেন। এডভোকেট শাহ জিকরুল আহমেদ খোকন বলেন- আমি খুবই সিরিয়াস। ইনশাআল্লাহ আমি পাস করবো। কিভাবে পাস করবো সেটা এখন বলবো না। যারা দেশকে ভালোবাসে, যারা মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবাসে, অহংকার মনে করে, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সবাই আমাকে ভোট দেবে। তাছাড়া আমি একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। সকল শ্রেণির মানুষই আমাকে ভোট দেবেন। আমার ভোটারদের বড় একটি অংশ আওয়ামী লীগেরই সমর্থক। আর মহাজোট প্রার্থী এবাদুল করিম বুলবুল বলেন- জাসদ ও জাতীয় পার্টি নিজেদের দলের প্রতীকে নির্বাচন করে দাবি করছে তারা মহাজোট প্রার্থী। এই অধিকার তাদের নেই। তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। মহাজোটের প্রতীক হচ্ছে নৌকা। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ ব্যাপারে আমি নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেব। তিনি আরো বলেন- এরা ভোটের মাঠে থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। আমরা বিপুল ভোটে জয়ী হবো। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ আছে এবং বর্তমান সংসদ সদস্য বাদল ভোটের মাঠে নামবেন বলেও জানান তিনি। হলফনামা নিয়ে উঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- আমি কোনো তথ্য গোপন করিনি। ২০০৮ এবং ২০১৮ সালে যে হলফনামা দিয়েছি দুটোই ঠিক আছে। ২০০৮-এ কৃষি জমি ছিলো দেখিয়েছি। ২০১৮-তে এসে এর কালেক্টর চেঞ্জ হয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী মামুনুর রশিদ বলেন- ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টি শক্তিশালী অবস্থায় আছে। এক নম্বর পজিশনে। বর্তমান পরিস্থিতি বজায় থাকলে আর প্রশাসন হস্তক্ষেপ না করলে আমরাই বিজয়ী হবো। এটা জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। বিএনপি’র প্রার্থী নাজমুল হোসেন তাপস বলেন- এখনো উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজমান। সব প্রার্থী যার যার মতো প্রচারণা চালাচ্ছে। এখানে ধানের শীষের অবস্থান ভালো। মানুষ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে আমাদের জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। শুধু এই আসনে নয় জেলার সবক’টি আসনেই জয়ী হবো আমরা।